সেন্টমার্টিনকে বাঁচাতে অর্ধশত সম্ভাব্য সুপারিশ তৈরি করেছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। দীর্ঘ সাড়ে ৫ বছর ধরে পর্যবেক্ষণ, পর্যালোচনা ও বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে সেন্টমার্টিন দ্বীপের শতাধিক সমস্যা নির্ধারণ করেছে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক)।
এসব সমস্যা উত্তরণে সেন্টমার্টিনকে বাঁচাতে ওই অর্ধশতাধিক সম্ভাব্য খসড়া সুপারিশ উপস্থাপন করা হয়েছে।
রোববার কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের শহিদ এটিএম জাফর আলম সম্মেলন কক্ষে ‘সেন্টমার্টিনের পরিবেশ, প্রতিবেশ এবং জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা ও ইকোট্যুরিজম উন্নয়নে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের নিমিত্তে অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময়’ সভায় এসব তথ্য জানানো হয়।
প্রস্তাবনায় রয়েছে- স্থানীয়দের ইকোলজিক্যালি বাসস্থান তৈরি, বাসিন্দাদের পেশাগত আইডি প্রদান, সাপ্তাহিক বা পাক্ষিক ভিত্তিতে প্রতিবেদন প্রেরণ, নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা, দ্বীপের জমি ব্যবহারের নীতিমালা প্রণয়ন, সব হোটেল-মোটেল ধারণক্ষমতা নির্ধারণ করা,
প্রতিদিন কী পরিমাণ পর্যটক যাচ্ছে বা যেতে পারবে তা যাচাই বাছাইকরণ, সরকারি স্থাপনা বা রেস্টহাউসসমূহ শুধুমাত্র দাপ্তরিক কাজে ব্যবহার, কোন ধরনের বর্জ্য সাগরে ফেলা যাবে না, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় একশ মিটার অন্তর ডাস্টবিন স্থাপন ও সেকেন্ডারি ডাম্পিং স্টেশন স্থাপন, জাহাজের যে কোনো বর্জ্য মূল ভূখণ্ডের প্রেরণ নিশ্চিত করণ, জাহাজ চলাচলে পারমিট দিতে সমন্বয় থাকতে হবে। জীববৈচিত্র রক্ষায় দ্বীপে নিস্তব্ধতা ও শান্তি বজায় রাখতে হবে। যে কোন প্রকার আলো, ফানুস, আতশবাজি এবং উচ্চ শব্দ সৃষ্টিকারী মাইক ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে হবে।
সেন্টমার্টিন বিচে প্রকাশ্যে ধূমপান নিষিদ্ধ করতে হবে। পাখি, মাছ, কচ্ছপ, কাঁকড়া ও প্রবাল রক্ষায় দ্বীপে স্পিডবোট চলাচল নিষিদ্ধ করতে হবে। শব্দ দূষণ রোধের যন্ত্র চালিত মোটরসাইকেল, ভটভটি এবং ব্যাটারি চালিত যানবাহন নিষিদ্ধ করে ম্যানুয়াল যানবাহন যেমন রিকশা-ভ্যান ব্যবহার নিশ্চিত করবে। প্রয়োজনের নিরিখে একটি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে হতে পারে।
তবে সব স্থাপনাকে ইকোটাইপের করতে উৎসাহিত করতে হবে। যারা সেন্টমার্টিন দ্বীপটি পুরো ঘুরে দেখবে এক হাজার ফি এবং রাতে অবস্থান করলে এন্ট্রি ফি হিসেবে সরকারি কোষাগারে ২ হাজার টাকা জমা দিতে হবে। সেই টাকা জাহাজ টিকিট কিংবা হোটেল কক্ষ ভাড়ার সঙ্গে নিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
এছাড়াও দ্বীপ বাঁচাতে পরিবেশ অধিদপ্তর উপকূলীয় বন বিভাগের পরামর্শের সেন্টমার্টিন দ্বীপের চার পাশে কমপক্ষে ১০ হাজার ম্যানগ্রোভ, কেয়াবন সৃষ্টি করবেন। পর্যটন ও দ্বীপবাসীর জন্য একটি মাত্র জেটি তৈরি করতে হবে। জেটি নির্মাণে পরিবেশ অধিদপ্তর ৭ দিনের মধ্যে ছাড়পত্র দিবে। দ্বীপে বিশেষ সংরক্ষিত অঞ্চল করতে হবে। সব হোটেল-মোটেল দোকান মালিক কর্তৃপক্ষ নিজস্ব সুয়ারেজ সিস্টেম স্থাপন করতে হবে।
এদিকে পর্যটককে সেন্টমার্টিনের শত্রু দাবি করে কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম বলেন, সেন্টমার্টিনকে বাঁচাতে হলে সেখানে পর্যটক যাওয়া নিরুৎসাহিত করতে হবে। একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য জাহাজ চলাচল নিষিদ্ধ করে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে হবে। স্থানীয় অধিবাসীদের প্রতিটি ঘরকেই ইকোট্যুরিজমে পরিণত করে সেখানেই পর্যটকদের থাকা-খাওয়া নিশ্চিত করা যায়।
সভায় প্রেজেন্টেশন প্রদর্শন করেন সরকারের অতিরিক্ত সচিব ও বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর বলেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপে প্রায় ৬৬ প্রজাতির প্রবাল, ১৮৭ প্রজাতির শামুক-ঝিনুক, ১৫৩ প্রজাতির সামুদ্রিক শৈবাল, ১৫৭ প্রজাতির গুপ্তজীবী উদ্ভিদ, ২৪০ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ, চার প্রজাতির উভচর ও ১২০ প্রজাতির পাখি পাওয়া গেলেও এখন অনেকগুলো ধীরে ধীরে কমছে। তিন ধরনের কাছিমের প্রজনন স্থান সেন্টমার্টিন কিন্তু পরিবেশ দূষণের কারণে কাছিমগুলো ডিম পাড়তে আসছে না।
জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট ফরিদুল ইসলাম বলেন, এত সিদ্ধান্ত নিয়ে লাভ নেই। আপাতত সেন্টমার্টিনে পর্যটক যাওয়া বন্ধ করা দরকার। যারা সেন্টমার্টিন নিয়ে বাণিজ্য করে, কাড়ি কাড়ি টাকা আয় করে তারা সেন্টমার্টিন বাঁচাতে এগিয়ে আসে না।
জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদের সভাপতিত্বে সভায় সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক, জাফর আলম, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমেদ, পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান, কউক সচিব আবু জাফর রাশেদসহ বিভিন্ন বিভাগের পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।